দেশে ৬০ ঘণ্টা ধরে কোনো সরকার নাই! ছোটবেলায় সবাই পড়ে এসেছি একটা রাষ্ট্র হতে ৪টি জিনিস লাগে – ভূমি, জনসংখ্যা, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। ৪ মেইন জিনিসের একটা নাই! সরকার জিনিসটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে যখন আমাদের কিছুই ছিল না (‘৭১ এর এপ্রিল), তখনও তাজউদ্দীনের মতো নেতারা সরকারগঠনের উপরেই সর্বপ্রথম জোর দিয়েছিলেন (অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার)।
দেশে ৬০ ঘণ্টা ধরে কোনো পুলিশ নাই। অর্থাৎ কোনো আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নাই! ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা লাগে সাধারণ ছাত্রের। বিশ্বে এই প্রথম সরকার পতন হয় নাই। এরচেয়েও জোরেশোরে প্রচুর সরকারের পতন ঘটেছে, কিন্তু এভাবে পুলিশ ব্যবস্থা সাথে গায়েব হয়ে গিয়েছে, এমন ঘটনা ইতিহাসে বিরল।
দেশে ৬০ ঘণ্টা ধরে পুরাপুরি বিচার ব্যবস্থা সচল নাই, নাই প্রশাসন (কাগজে কলমে থাকলেও)! সচিবালয়ে সচিবরা পুরাপুরি আসতেসেন না। মাঠ প্রশাসনের অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দরকারি দপ্তর নামকাওয়াস্তে খোলা।
এখন, ৬০ ঘণ্টার এই নাই নাই তে কী হয়েছে? Absolute chaos & panic. আসল বাঘ – মনের বাঘ ২টাই আছে। এই দেখি মাথায় রক্ত চড়ে যাওয়া ঘটনা, পরে দেখি সেটা ফলস এলার্ম, পরে আবার দেখি এতো বড় না হলেও ঘটেছে ঠিকই।
এই ৬০ ঘণ্টার নাই নাইতে ব্যর্থতাটা কার?
🏦 সরকার নাই:
দোষী আন্দোলনকারীরা?
– না!
দোষী সম্বনয়কেরা?
– অনেক কথা শুনা যাচ্ছে যে মতের অমিল, বিভিন্ন পক্ষের ইচ্ছাকৃত দেরি ইত্যাদি। এটা একটা আনপ্রেসিডেন্টেড সময়, সুতরাং সম্বনয়দের মতো তরুণ, যারা মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ঘাড়ে এতো বড় দায়িত্ব পেয়ে গেছে, ঢালাওভাবে তাদের দোষ না দেই। তাদের তুলনায় বহুগুণ দোষী সেই পাপী যে তড়িঘড়ি করে তখত ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সেই জালিনের যার ডিকশনারিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর বলে কিছু ছিল না।
🚓 পুলিশ ও আইন না থাকা:
দোষী আন্দোলনকারীরা?
– না!
দোষী সম্বনয়কেরা?
– না!
তাহলে কারা?
এখানে মূলত দোষ ৩ পক্ষের।
প্রথমত, পুলিশের। পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ কোন পর্যায়ে একটা বলে বুঝানো যাবে না। বিশেষত ঢাকার বাইরের জেলাগুলায়। পুলিশ হাসিনা পালানোর কেবল কয়েক ঘন্টা আগেই ঠান্ডা মাথায় মানুষ নখু করেছে যাত্রাবাড়িতে! What’s happening is not right. But they legit brought it on themselves.
দ্বিতীয়, বিদায়ী জালিমের। ১৫ বছরে দেশের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে পুরাপুরি করাপ্ট আর ক্রিপল বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। আর গত ২ সপ্তাহে তাদেরকে দিয়ে দেখালেন নিজের সর্বনিম্ন রূপ।
তৃতীয়, দেশের দায়িত্ব কী একদমই কারো হাতে নাই? অবশ্যই আছে। হাসিনা পালানোর পর সরকার আসা পর্যন্ত দায়িত্বটা কে পালন করবে, সেটা ৫ তারিখ বিকাল ৪টার প্রেস কনফারেন্সেই বলা হল। সেটা হল দেশের সেনাবাহিনী।
সুতরাং দেশের নানা প্রান্তে শৃঙ্খলা না বজায় রাখতে পারার ব্যর্থতা এই ৩ পক্ষের উপরেই বর্তায়।
অপরাধগুলো কে করেছে সেই অ্যাসাম্পশন নিয়ে গেলাম না। আওয়ামী স্যাবোট্যুর, বিএনপি, জামাত, ডির্যা কাল বা যেই করুক – মেইন দোষী সে। কিন্তু সেটা প্রতিরোধের ব্যর্থতার জন্যে দোষী কারা, সেটাও একটু ভাবি। কারণ আমরা এই হতাশায় ঢালাওভাবে বলে ফেলতেসি “এই জন্যেই কী স্বাধীন হলাম”, “আগেই ভালো ছিল” – আরও কত কি।
কথায় কথায় ৫০০+ মানুষের জীবনকে ফেলনা না বানাই। এতো সহজে দেশকে নিয়ে ধৈর্য্য না ধারায়। আমরা ধৈর্য হারালেই খপ করে আবার শেকলে বন্দী করে ফেলবে কোনো না কোনো ফ্যাস ইস্ট। রাগটা সঠিক জায়গায় চ্যানেল করি। প্রশ্নগুলো সঠিক জায়গায় করি।
✍️ মিনহাজ চৌধুরী
কোর মেম্বার, ইয়ুথ পলিসি ফোরাম – ওয়াইপিএফ