নতুন দিনের বাংলাদেশে কোন জিনিসটার সংস্কার দরকার? প্রশ্নটা করার পরে আপনি উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে থাকলে, দেখবেন যে এখানে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা আপনি লিখে যেতে পারবেন হাজারো সমস্যা নিয়ে যেগুলোর সংস্কার আবশ্যিক। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা সরকার যেসব সমস্যার বীজ রোপন করে গিয়েছে, সেইগুলোকে দূর করতে আমাদের আরো অনেক সময় লাগবে এইটা বলাই বাহুল্য।
তবে, সবচেয়ে বেশি জরুরি মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা। Digital Security Act, ICT ACT এর ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠরোধ করার মাধ্যমে বিগত সরকার এবং তার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনা ও সমালোচনার সমস্ত পথকেই বন্ধ করে রেখেছে।
জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারেও ছিলো অস্বাভাবিক সেন্সরশিপ। এমনকি ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়াতেও নজরদারি ছিলো সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির। এছাড়াও, বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারির উপর সেন্সরশিপ দেওয়া হয়েছিলো শুধুমাত্র সরকারের “অপছন্দনীয়” মতামত প্রদান করার কারণে।
২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৫ বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৪৩৬ টি মামলা করা হয়েছিলো এবং ৪৫২০ জন কে আসামী করা হয়েছিলো। এর মধ্যে ৪৫১ জন পেশায় সাংবাদিক। একই আইনে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২৫ শতাংশ রাজনীতিবিদ। ফেসবুক পোস্টের কারণে ৯০৮ টি মামলা হয়েছিলো যেখানে মোট ২৩২৮ জনকে আসামি করা হয়েছিলো।
মিডিয়া, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচনাকে গ্রহণ না করার অভ্যাসের চূড়ান্ত অবস্থা আমরা দেখেছি গতকাল। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং আগামীতে যারা সরকার গঠন করবে তারা যাতে আইসিটি এক্ট এর বিভিন্ন ক্লজ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের মত দমনমূলক আইন কে প্রশ্রয় না দেয় বা নতুন মোড়কে আইনটিকে আমাদের সামনে না নিয়ে আসে সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।
ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এবং এই ধরণের দমনমূলক আইন নিয়ে ওয়াইপিএফ বেশ কয়েকটি সংলাপ আয়োজন করেছিলো বিগত কয়েক বছরে। এসব সংলাপে উপস্থিত বক্তারা সবসময়ই এই আইনগুলোর সমালোচনা করেছেন এবং আইনগুলোর সংস্কার ও জনবান্ধব হওয়ার প্রত্যাশা করেছেন।
আমরা মনে করি, বাক স্বাধীনতা, সমালোচনা, ও আলোচনার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এই ধরণের দমনমূলক আইনগুলোকে পরিহার করার মাধ্যমে সংস্কারের পথটি সুগম হতে পারে।
——————
✍️ ইনাম আহমেদ শুভ
লিড, ওয়াইপিএফ টেকনোলজি এন্ড ইনোভেশান পলিসি টিম