ব্রেটন উডসঃ কিভাবে তৈরি হলো আজকের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা?

Written By : Hosnain R. Sunny

কখনো কি চিন্তা করে দেখেছেন, আপনার টাকার বিপরীতে কিভাবে চাইলে আপনি ডলার, রূপি, পাউন্ড প্রভৃতি মুদ্রা মানি এক্সচেঞ্জ অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবর্তন করে নিতে পারছেন? কিভাবে সেই পরিবর্তিত মুদ্রা দিয়ে বিদেশের মাটিতে প্রয়োজনীয় ক্রয় করতে পারছেন? তার চেয়ে বড় কথা, এই যে একশত টাকার বিনিময়ে আপনি বিভিন্ন মানের ডলার, রুপী অথবা পাউন্ড পাচ্ছেন, এর বিনিময় মূল্য টা নির্ধারণ করে কে? এই মূল্য আবার বাড়ে অথবা কমেই বা কেন? প্রশ্নগুলো কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রশ্নগুলো যদি আপনার মাথায় উদয় হয়ে থাকে, তবে আপনাকে এটি জানিয়ে রাখা অবশ্যই ভাল যে, এ সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনা বিশ্বের নীতি নির্ধারকদের মাথায় আরও অনেক আগেই এসেছে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি আজকের এই আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা। তবে এই অবস্থায় আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকগুলো ধাপ এবং কয়েক শত বছর। তবে কিভাবে পেলাম আজকের আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা? এই ব্যবস্থা কি রকম চড়াই উৎরাই পার করে এসেছে? এটি আমাদের জন্য ঠিক কতটুকু লাভজনক অথবা ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে? তা নিয়েই আলোচনা করা হবে কয়েকটি ধারবাহিক পর্বে।
আধুনিক আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয় ব্রেটন উডস ব্যবস্থা কে। ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অংগরাজ্যের ব্রেটন উডস নামক স্থানে ৪৪ টি দেশের প্রতিনিধিগণ বসে নয়া আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করেন। তবে আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করব কেন বিশ্বের নয়া এই অর্থব্যবস্থার প্রয়োজন হয়েছিল, সে সম্পর্কে।
স্বর্ণের আদর্শ মান স্থির করা এবং অর্থের সোনালি সময়
উনবিংশ শতাব্দীতে অর্থব্যবস্থার উপর একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল গ্রেট ব্রিটেনের। মূলত ব্রিটেনই অন্যান্য দেশের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিত এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেও ব্রিটেনের প্রচুর প্রভাব ছিল।
১৮৭০ সাল থেকে স্বর্ণ কে আদর্শমান (Gold Standard) হিসেবে ধরে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা পরিচালিত হত। এ সময়ের আগে অনেক দেশে স্বর্ণ, অনেক দেশে দুইটি ধাতু স্বর্ণ ও রুপা , আবার অনেক দেশে শুধু রুপাকে আদর্শমান হিসেবে ধরা হত। ১৮৭০ সাল থেকে স্বর্ণ কে আদর্শ ধরার ফলে অন্য সকল দেশের মুদ্রার সাথে এর পরিবর্তন হার (Conversion Rate) ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল এবং এই হার ছিল নির্দিস্ট ও অপরিবর্তনীয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ৫০০০ টাকার বিপরীতে ১ টি স্বর্ণের বার লেনদেন নির্ধারিত ধরা হলে এটি সবসময় একই থাকবে, উঠানামা করবে না। আবার, ৫০ ডলারে বিপরীতে যদি একটি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়, তবে তাও অপরিবর্তিত থাকবে। ফলে দুই দেশের মুদ্রার মান স্বর্ণের বিপরীতে একই থাকছে। অর্থাৎ কেউ যদি বাংলাদেশ থেকে আমেরিকাতে যায় তবে সে ৫০০০ টাকায় ৫০ ডলার পাবে এবং ৫০ ডলারে ৫০০০ টাকা পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হত স্বর্ণের মাধ্যমে। ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা কোন একটি দেশ ঠিক তত পরিমাণ মুদ্রা ছাপাতে পারবে , যতটুক তার স্বর্ণ রিজার্ভ আছে। কেউ ইচ্ছা করলেই এই ব্যবস্থায় ইচ্ছামত টাকা ছাপাতে পারবে না। এর ফলে, কোন একটি দেশ যদি বেশি বেশি করে আমদানী এবং কম রপ্তানি করে , তাহলে তার স্বর্ণের মজুদ কমে আসবে। ফলে টাকা ছাপানোও কমে আসবে। এর ফলে সাধারণ জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে এবং মুদ্রাস্ফীতিও কম হবে। জিনিস পত্রের দাম কম হলে অন্য দেশে তা রপ্তানী করা সহজ হবে। বেশি পরিমাণে রপ্তানি করা গেলে এবং আমদানী কম হলে দেশটির স্বর্ণের মজুদ আবার বেড়ে যাবে। ফলে টাকা ছাপানোও বেড়ে যাবে। তাই বলা যায়, স্বর্ণপদ্ধতি ছিল একটি চক্রাকার ভারসাম্য রক্ষা পদ্ধতি যা নিজেই নিজেকে শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ফলে মূল্য পরিশোধের ভারসাম্য বজায় থাকবে। তাছাড়া, স্বর্ণ আদর্শ মান ব্যবস্থায় স্বর্ণ রপ্তানি এবং আমদানি করা যেত এবং এর কোন নির্দিস্ট সীমা ছিল না।
১৮৭০ সাল থেকে সোনার আদর্শ মান আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থায় জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ১৮৭১ সালে জার্মান সাম্রাজ্য এবং ১৮৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণকে তাদের আদর্শমান হিসেবে ঘোষণা করে। ১৮৭৮ সাল নাগাদ ফ্রান্স এবং অন্য সকল ইউরোপীয় দেশ হতে রুপার প্রচলন অর্থব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়ে। ১৮৭০ থেকে ১৯১৪– এই সময়কাল কে বলা হয় স্বর্ণের আদর্শমান যুগ এবং আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা এ সময়কালে তার সোনালী সময় অতিবাহিত করে। তাই এ সময়ে সোনাই আন্তর্জাতিক পরিশোধের মূল মাধ্যম হয়ে উঠে তবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আকস্মিকতা পুরো আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থাকেই বদলে দেয়। কিন্তু কিভাবে?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার পতন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল এক অভাবনীয় ঘটনা। সমস্ত ইউরোপজুড়ে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাছাড়া তখন ছিল সাম্রাজ্যবাদের যুগ। ইউরোপীয় শক্তিগুলোর এশিয়া এবং আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কলোনি ছিল। ফলে সেসব কলোনিগুলোতেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এত বিশাল আকারের যুদ্ধ পরিচালনায় পরাশক্তিগুলোর দরকার ছিল বিপুল পরিমাণ রসদের। এই রসদের যোগান দেওয়ার জন্য চাই প্রচুর অর্থ। কিন্তু তখনকার আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা অনুযায়ী, একটি রাস্ট্র ঠিক তত পরিমাণ অর্থই ছাপাতে পারবে যতটা তার স্বর্ণের মজুদ রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি এক ভিন্ন ঘটনা । সাধারণ অবস্থার জন্য যেটা প্রযোজ্য সেটা যুদ্ধের মত জরুরি অবস্থায় খাটে না – এই অঘোষিত নিয়মকে অনুসরণ করতে গিয়ে যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার একের পর এক নিয়ম ভাংতে শুরু করে।
স্বর্ণ কে আদর্শমান ধরে করা ব্যবস্থায় মজুদ অনুযায়ী অর্থ ছাপাতে হবে, কিন্তু যুদ্ধরত দেশগুলো নিজেদের রসদের প্রয়োজন মেটাতে নিজেদের ইচ্ছামত অর্থ ছাপানো শুরু করে। নির্দিস্ট বিনিময় হার ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে ভাসমান বিনিময় হারের প্রচলন শুরু হয়। ফলে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পূর্বের অর্থব্যবস্থার অবসান ঘটে ১৯১৪ সালে, যুদ্ধ শুরুর বছরেই।
দুই বিশ্বযুদ্ধ মধ্যবর্তী সংকট কাল
যুদ্ধের পর পরই স্বর্ণের আদর্শমান ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ পুনরায় নেওয়া হয়। কেননা এই ব্যবস্থায় দীর্ঘ ৪৪ বছর আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থা মসৃণ এবং স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু যুদ্ধকালীন ব্যবস্থা দেশগুলোতে কেবল যুদ্ধের সময়ে নয়, বরং যুদ্ধ পরবর্তীকালেও অর্থনীতিতে বেশ ভোগাচ্ছিল। যুদ্ধ শেষ হবার সাথে সাথেই প্রায় সব দেশে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় যা অনেক দিন ধরে চলছিল। অর্থনীতিতে কোনভাবেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পূর্বের ব্যবস্থা কে ফিরিয়ে আনার জন্য ৩৪ টি দেশের সম্মেলন বসে ১৯২২ সালে, জেনোয়াতে।
জেনোয়া সম্মেলনে ব্রিটেন বরাবরের মত তার প্রভাব বজায় রাখে। সম্মেলনে সোনার অর্থায়নের প্রতিই বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো স্বর্ণ আদর্শমান ব্যবস্থা কে ফিরিয়ে আনার ব্যপারে একমত হয়। তবে কিছু পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। সকল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে স্বর্ণ রিজার্ভ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু স্বর্ণ সরবরাহ কম থাকার কারণে বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে বড় পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ রাখা সম্ভব হয় না। তবে গ্রেট ব্রিটেনের মত কিছু বড় রাস্ট্র বেশি পরিমাণে স্বর্ণ মজুদ রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তবে এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও ১৯২০ এর দশকে স্বর্ণের বিপরীতে ইউরোপীয় মুদ্রার অস্থিতিশীলতা ধারাবাহিকভাবে বজায় ছিল।
পুরানো সময়ে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য সকল দেশকে পূর্বের নির্দিস্ট বিনিময় হারে (Fixed Exchange Rate) ফিরে যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা দেশগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে নাই। তাই বিনিময় হার ছিল ভাসমান (Floating Exchange Rate)। ফলস্বরূপ, দেশসমূহে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়। অন্যদিকে, কিছু দেশের মুদ্রা, যেমন ডলার যুদ্ধ পূর্ববর্তী স্বর্ণের আদর্শমান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। সেসব মুদ্রার সাথে পাল্লা দিতে হলে ভাসমান বিনিময় হারের মুদ্রাগুলোর মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক কমিয়ে আনতে হত, অন্যথায় মুদ্রার মান অনেক কমে যেত। ফলে বিভিন্ন মুদ্রার মধ্যে ব্যাপক অসমতা পরিলক্ষিত হতে শুরু করে।
তবে ব্রিটেন এবং আমেরিকা এ সময়ে একে অপরকে বেশ সহায়তা করে। ব্রিটেন স্থানীয় বাজারে অস্থিতিশীলতার ঝুকিকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যায় এবং অন্যান্য দেশকেও চাপ দিতে থাকে। নানা অসুবিধা থাকা সত্বেও এরূপ করার কারণ হচ্ছে নিজেদের আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অবস্থান কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার পুনর্বাসনা। এ কাজে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, কেননা যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে পাউন্ড স্থিতিশীল হলে সাধারণ আন্তর্জাতিক বাজারও স্থিতিশীলহবে, ফলে আমেরিকা তাদের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
১৯২৫ সাল নাগাদ ব্রিটেন-আমেরিকা যুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক অবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন যে, তা ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর ছিল। এ পদক্ষেপের ফলে ব্রিটেনে মজুরি কমে যাওয়া এবং ব্যাপক বেকারত্ব সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবুও এক বছরের মধ্যে আরও ৪০ টি দেশ এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
তবে খুব বেশিদিন এই প্রক্রিয়া টিকে থাকতে পারেনাই। ১৯৩১ সালে ব্রিটেন স্টার্লিং এর বিপরীতে স্বর্ণের পরিবর্তন যোগ্যতা বন্ধ করে দেয়, কারণ ব্যাংক অব ইংল্যান্ড একই বছরে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড সমমূল্যের স্বর্ণ এব্ং বৈদেশিক লেনদেন হারিয়েছিল। ফলে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বর্ণের আদর্শমান পুণরায় চালু করার প্রক্রিয়া ভূপাতিত হয়।
এদিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বড় পাওনাদাতা হয়ে যায়। বিশ্বযুদ্ধের মিত্রদের অর্থের যোগানদাতা হওয়ার সুবাদে ১৯১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থের যোগানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ঋণ হিসেবে দেয়া এসব অর্থের বেশিরভাগ অংশ যুক্তরাষ্ট্রের পাওনা ছিল গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইতালির কাছ থেকে। আবার, ফ্রান্স, ইতালি এবং রাশিয়াও ব্রিটেনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল যার পরিমাণও নেহায়েত কম নয়। ১৯২০ এর দশকেও যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় রাস্ট্র গুলোকে প্রচুর ঋণ দেয়। তা সত্ত্বেও আমেরিকা বিচ্ছিন্ননবাদ কে তাদের নীতি হিসেবে গ্রহণ করে। তারা বিশ্বের অর্থনীতির সম্পর্কের উন্নয়নকে নেতৃত্ব দিতে চায়নি্‌ কেননা তারা মনে করত ঋণগ্রহীতা দেশগুলো তাদের যুদ্ধ ঋণ মাফ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চাপ দিতে পারে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থে।
ফলস্বরূপ দেখা যায় যে, পুরো বিশের দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ঋণগ্রহীতা রাস্ট্রসমূহ কে অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। ফলে মিত্রশক্তিরা জার্মানি কে যুদ্ধের ক্ষতিপূরন দিতে বাধ্য করে বিতর্কিত ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে, যদিও যুদ্ধে পরাজিত ও বিদ্ধস্ত জার্মানির পক্ষে ক্ষতিপূরণ দেয়া ছিল তাদের অর্থনীতি কে ধ্বংস করার সামিল। এই পদক্ষেপ সাধারণভাবে সমগ্র ইউরোপের স্থিতিশীলতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। অপরদিকে, বিশ এবং ত্রিশের দশকে ঋণের অর্থ ফিরত দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার অস্থিতিশীলতাকেই নিরবিচ্ছিন্ন রাখে।
তৎকালীন এসব পরাশক্তির অদক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির নীতিমালার প্রতি অজ্ঞানতাই ১৯৩০ এর দশকে মহা বিপর্যয় ডেকে আনে যা “The Great depression” নামে পরিচিত। এই মহামন্দার কবলে পড়ে বিশ্বের কম বেশি সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে, ভার্সাই চুক্তির বিতর্কিত ধারা গুলোকে জার্মানরা তাদের প্রতি অন্যায়মূলক আচরণ হিসেবে দেখে এবং বিশের দশকে উগ্র ফ্যাসিবাদী দল নাৎসি পার্টির উত্থান ঘটে। ১৯৩০ এর দশকে জার্মানির ক্ষমতায় আসেন নাৎসি দলের নেতা এডলফ হিটলার এবং খুব দ্রুতই ইউরোপ মাত্র বিশ বছরেই মধ্যে নিজেদেরকে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দুয়ারে আবিষ্কার করে।
শেষ কথা
১৯৩০ এর দশক জুড়েই পরাশক্তিগুলোর নেতারা উপলব্ধি করেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা পুনর্গঠন ছাড়া অর্থনীতির বিপর্জয় থেকে উত্তরণের উপায় নেই। কিন্তু এরই মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দুয়ারে কড়া নারলে বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রগুলো অর্থনীতির পুনর্গঠন কে পিছিয়ে দিয়ে যুদ্ধ করতে উদ্দ্যত হয়। ১৯১৪ সালে পূর্বের যে ব্যবস্থা ছিল, তা ১৯৪৪ সাল নাগাদ আর মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি এবং পরবর্তীতে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। ১৯৪৪ সালে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার পুনর্গঠন লক্ষে যখন ব্রেটন উডস ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রগুলো আলাপ আলোচনা করছিল, তখনই পরিস্কার হয়ে যায় যে, এর মাধ্যমে স্বর্ণ কে আদর্শমান ধরে করা অর্থব্যবস্থা আমূলে পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং বিশ্ব নতুন ধাঁচের আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার যুগে পরিচালিত হবে।
Image may contain: sky, tree, grass, cloud, plant, outdoor and nature

Leave a Comment

Scroll to Top