Road to Reform ক্ষেত্র: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

৩৬ এ জুলাই ২০২৪, বাংলাদেশ ছাত্রজনতার রক্তক্ষয়ী এক বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে এবং দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সংস্কারের।

একজন সাধারণ জনগণ এবং ছাত্র হিসেবে আমি মনে করি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে যেমন সংস্কার প্রয়োজন তেমনি সংস্কার প্রয়োজন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে। নিম্নে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে আমি কেমন পরিবর্তন আশা করছি তা উল্লেখ করেছি।

ওয়েবসাইট আপডেট:

বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইটটি আপডেট করে আরও ইউজার ফ্রেন্ডলি করে গড়ে তুলতে হবে এবং বাংলাদেশ এই পর্যন্ত যতগুলি চুক্তি বা ডিল সাইন করেছে তা প্রকাশ্যে এলে যদি একান্তই জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি না হয় তাহলে তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে।

দূতাবাসের কার্যক্রম রিপোর্টিং:

প্রতিটি দূতাবাসকে নিয়মিতভাবে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পাবলিশ করতে হবে যেখানে তারা দেশ ও জাতির স্বার্থে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। পাশাপাশি এই রিপোর্টটি জনগণ যাতে সহজে এক্সেস করতে পারে সেজন্য ওয়েবসাইটে আপলোড করে রাখতে হবে।

আর্থিক স্বচ্ছতা:

প্রতি অর্থবছরের শেষে কনস্যুলেটগুলোকে তাদের ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট পাবলিশ করতে হবে এবং সেই রিপোর্টে বাজেট এলোকেশন কিভাবে হয়েছে, ফাইনান্সিয়াল ডিসিশন গুলো কিভাবে নেয়া হয়েছে এবং অর্থ কিভাবে খরচ হয়েছে তার ডিটেইলড ব্রেকডাউন থাকতে হবে।

প্রয়োজনে একটা ইনফোগ্রাফিক সেকশন রাখতে হবে যাতে করে সাধারণ জনগনের জন্য এই রিপোর্টটি এক্সেসিবল হয়।

সাংস্কৃতিক প্রমোশন:

বাংলাদেশের সংস্কৃতি তথা সাহিত্য, শিল্পকর্ম, সংগীত, ট্রাডিশন প্রভৃতির পজিটিভ দিকগুলো অনুবাদ, ডাবিং সহ অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

দূতাবাস গুলো স্ব স্ব দেশের কালচারাল অর্গানাইজেশন গুলোর সাথে একত্রে বিভিন্ন ধরনের কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে।

অর্থনৈতিক প্রমোশন:

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় খাতগুলো খুঁজে বের করে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে দেশীয় ব্যবসায়ীদের সাথে বিদেশি সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সংযোগ করে দিতে হবে। পাশাপাশি যেসকল বিদেশি পণ্য বাংলাদেশের জন্য উপযোগী সেসব পণ্য খুঁজে বের করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একত্রে সেসব পণ্য এডপ্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাসপোর্ট শক্তিশালীকরণে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ:

বাংলাদেশের পাসপোর্ট বিশ্বের অন্যতম দূর্বল পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তুলনা করলেও আমাদের পাসপোর্টের পারফর্ম্যান্স অনেক বাজে। এমতাবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে করে আমাদের পাসপোর্ট আরো শক্তিশালী হয়। এতে করে আমাদের ভিসা বিহীন বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করা যেমন সহজ হবে তেমনি বিদেশি এয়ারপোর্টগুলোতে ভোগান্তি কমবে এদেশের সবুজ পাসপোর্টধারী জনসাধারণের।

এক্সেসিবিলিটি:

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যাতে সকল বাংলাদেশি খুব সহজেই কনস্যুলেটগুলো থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছে আস্থার সর্বপ্রথম নাম যাতে এম্বাসিগুলো হতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফিডব্যাক সিস্টেম:

এম্বাসিগুলোর একাউন্টেবিলিটি বাড়ানো এবং সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সহজ ও এক্সেসিবল ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করতে হবে যেখানে অনলাইনে এবং প্রয়োজনে নিজের পরিচয় গোপন রেখেই অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা থাকবে, এবং এসব অভিযোগ দ্রুততার সাথে আমলে নিয়ে সমস্যা নিরোসনের ব্যবস্থা করতে হবে

প্রেস কনফারেন্স:

প্রতিটি বিদেশ সফর শেষে এবং বৈদেশিক কোনো দূতের সাথে মিটিং এর পর প্রেস কনফারেন্সের ডাক দিতে হবে এবং মিটিং এর বিস্তারিত জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি এই প্রেস কনফারেন্সের প্রতিটি প্রশ্নোত্তর ডকুমেন্ট আকারে ওয়েবসাইটে আপলোড করে রাখতে হবে।

রিওয়ার্ড সিস্টেম:

প্রতিবছর যেই এম্বাসি সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করবে সেই এম্বাসির কর্মচারীদের জন্য রিওয়ার্ড এবং খারাপ পারফর্মেন্সের জন্য পানিশমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে হবে। রিওয়ার্ড ও পানিশমেন্টের কী কী ক্রাইটেরিয়া আছে তা এবং প্রত্যেক এমপ্লইয়ির পার্ফরমেন্স, রিপোর্ট হিসেবে থাকতে হবে।

 

✍️ রাশিদুল হাসান
ডেপুটি লিড, ওয়াইপিএফ ফরেন পলিসি টিম

 

Scroll to Top