আগামীর পথচলায় তারুণ্যের প্রস্তুতি

power hour-2

লিখেছেনঃ

কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ
লিড, পলিসি নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট এন্ড ডেলিভারি ইউনিট

ফারিয়া জান্নাত প্রভা
এসোসিয়েট, ইকোনমিক এন্ড জবস পলিসি টিম

 

 

ইয়ুথ পলিসি ফোরাম এর সিরিজ “দি পাওয়ার আওয়ার – কনভার্সেশনস টু ইন্সপায়ার” এর ২য় পর্ব “আগামীর পথচলায় তারুণ্যের প্রস্তুতি” তে আলোচনা হয়েছে এমন দুজন মানুষের সাথে যারা তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

আলোচনায় অংশ নেওয়া মোহাম্মদ সাকিব খালেদ জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সমাপ্ত করে তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যোগ দেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি অন্য কিছু করতে চাচ্ছেন। তাই পরবর্তীতে তিনি সুইস কন্ট্রাক্টে পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন, যাতে করে তার কাজের মাধ্যমে সমাজও উপকৃত হয়।

“শেভেনিং স্কলারশিপ” বৃত্তি পাওয়া একজন স্কলার তিনি। তিনি তরুণদের দক্ষ করে তোলার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প ডিজাইন করেন এবং বাস্তবায়ন করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্সে গ্লোবালাইজেশন এন্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করছেন। এছাড়াও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকেও তিনি অর্থনীতির উপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। 

কিশোর বয়সে মো সোহান হায়দার এর ইচ্ছে ছিলো ফিল্ম মেকার হবার। পরবর্তীতে নানা বাস্তবতায় তা হয়ে উঠেনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইবিএ এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর মধ্যে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকেই বেছে নেন। পরবর্তীতে তিনি লন্ডনে মেট ফিল্ম স্কুল, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ফিল্মমেকিং এ ডিপ্লোমা করেন তবে হলিউডে পাড়ি জমানোর স্বপ্নকে ছেড়ে আবার দেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইবিএ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন৷ বিভিন্ন কর্পোরেট সেক্টরে অভিজ্ঞতা লাভ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন স্মার্টিফায়ার একাডেমি, যা তরুণদের দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করে। বিটুবি মার্কেটিং ও কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের ক্ষেত্রে তার কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বর্তমানে তিনি  কানাডায় অবস্থান করছেন এবং অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলফার স্কুল অফ ম্যানেজম্যান্টে বৃত্তি পেয়েছেন এবং সেখানে এমবিএ প্রোগ্রামে পড়াশোনা করছেন। 

ইউনিভার্সিটির সময়গুলোতে কী কী স্কিল অর্জন করা উচিত?- এই প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ সাকিব খালেদ বলেন, ক্যারিয়ারের কিছু মিসিং স্টেপ থাকে যা হলো সফট স্কিলস। নিজের কাজে ভালো হওয়ার পরও শুধুমাত্র টিমের সাথে কাজ করার দক্ষতা না থাকার কারণে অনেক সময় চাকরিদাতা কেউকে নিজের কোম্পানিতে নিতে উৎসাহ পান না। তাই যোগাযোগে এবং টিমে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, “প্রত্যেক অর্গানাইজেশনই একজন লিডারের খোঁজে থাকে”। তাই লিডারশীপ স্কিল গুলো থাকা খুবই দরকার। তাই পড়াশোনা ও টেকনিক্যাল স্কিল অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন সফট স্কিলসও অর্জন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।

মো সোহান হায়দারের পরামর্শ হলো, “একটি রোডম্যাপ তৈরী করে ফেলুন। প্রথম বছরে কী কী করার লক্ষ্য, পরবর্তী বছরে কী কী অর্জন করার লক্ষ্য, সবগুলো লক্ষ্যই থাকবে ঐ রোডম্যাপে। একাডেমিকালি কী অর্জন করতে চান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কেমন অর্জন চান, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে কেমন লক্ষ্য আপনার, কেমন কানেকশন বা নেটওয়ার্কিং করতে চান এমনকি রোমান্টিক রিলেশনশিপ করতে চান কিনা, তা নিয়েও কী প্রত্যাশা – সবকিছুই থাকবে এই রোডম্যাপে। এক্ষেত্রে একজন ক্যারিয়ার কাউন্সিলর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই কম দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলো পদক্ষেপ নিতে পারে।”

এই পর্যায়ে ওয়েবিনারটির মডারেটর ফাতেমা তুয জোহরা যোগ করেন, কমিউনিকেশন বলতে শুধুমাত্র ফ্লুয়েন্সিকে বোঝায় না। সঠিক প্রেক্ষাপটে সঠিক মেসেজটা সঠিক ভাবে দেওয়া পারফেক্ট কমিউনিকেশনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

উদ্যোক্তাদের শুরুর পদক্ষেপগুলো কী হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে সোহান হায়দার বলেন, প্রথমত একজন উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত সে কী করতে চায় এই বিষয়ে। কিছু প্রশ্ন নিজেকে করুন, ‘আমি কী করতে চাই, আমার লক্ষ্য অর্জনের স্ট্র‍্যাটেজিগুলো কী, আমার কী পর্যাপ্ত রিসোর্স আছে, আমার টার্গেট মার্কেট দেখতে কেমন, আমার রেভেনিউ আর্নিং মডেল কেমন হবে, আমি কিভাবে আমার নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাবো?’  

এছাড়াও নিজের পুরো আইডিয়া ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বোঝানোর সক্ষমতা থাকতে হবে, নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে ৩০ সেকেন্ডে এলিভেটর পিচ দেয়া, এবং ছোট্ট ৩ মিনিটের প্রেজেন্টেশন স্লাইড প্রস্তুত রাখতে হবে এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রত্যেকটা প্রজেক্ট শেষে প্রজেক্টটি থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নোট ডাউন করতে হবে। যাতে করে পরবর্তী প্রজেক্টগুলো হয়ে উঠবে আরও উন্নত। এটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল (পিএমপি) দের একটি চমৎকার প্র্যাক্টিস – এই ডকুমেন্টটিকে  ‘Lesson Learned’ বলা হয়।  

নিজের ব্যর্থতাকে কীভাবে নেওয়া উচিত?- এমন প্রশ্নের উত্তরে সোহান বলেন, “নিজের ব্যর্থতাকে স্বীকার করুন, নিজের ইগোকে ঝেড়ে ফেলে দিন। ভুল এবং ব্যর্থতাকে জীবনের অংশ হিসেবে ধরে নিতে হবে। ঐ দিনের ঐ মূহুর্তে আপনি ভুলটি করেছিলেন, আজকের আপনি হিসেবে তাকে ক্ষমা করে দিন এবং খুঁজে বের করুন, কি কি করলে আগামীতে আপনি এই ভুল আর করবেন না।”

“নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকুন। যদি দেখেন যে, একই ভুল বারবার হচ্ছে তাহলে মেন্টরের সাথে কথা বলুন, দরকার হলে টাকা খরচ করে ট্রেনিং করুন। নিজের উপর বিনিয়োগ করলে ক্যারিয়ারে ডিভিডেন্ড পাবেন।” 

একই প্রসঙ্গে মোহাম্মদ সাকিব খালেদ বলেন কীভাবে তিনি নিজে নিজের জীবনের ব্যর্থতা অতিক্রমে নিজের দক্ষতার জায়গাগুলো নিয়ে সবসময় সচেতন ছিলেন এবং কোথায় আরো কাজ করার সুযোগ আছে তা নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন। তার এই চিন্তাধারায় অবদান ছিলো “Mindset: The New Psychology of Success by Carol Dwek” বইটির যেখানে ‘ফিক্সড মাইন্ডসেট’ এবং ‘গ্রোথ মাইন্ডসেট’ নিয়ে ধারনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও তিনি বলেন, বর্তমান যুব সমাজের ‘স্টার্টআপ নিয়ে আংশিক ধারণা নিয়ে। এরই প্রেক্ষিতে এক তিনি চমৎকার বিষয় বলেন তা হলো, স্টার্টআপ মানেই যে নতুন আইডিয়া হতে হবে তা হয় অথবা টেকনোলজির সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে তা নয়। বরং কোনো পরিকল্পনা যদি জনসমাজের কাজে লাগে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তাও স্টার্টআপ এর আওতায় বলা যাবে, এমনকি এটি যদি কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় অবদান রাখে সেটিও স্টার্টআপ এর অন্তর্ভুক্ত। 

এরপর পরবর্তীতে আলোচনায় উঠে আসে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জিজ্ঞাসা এবং মোহাম্মদ সাকিব এবং মো সোহান হায়দার কথা বলেন এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং কারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারবে তা নিয়ে বলেন যেখানে উঠে আসে সেখানের সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারা, নিজের জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার গুন, অর্থনৈতিক সসচ্ছলতা এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে মেশার গুণের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।এছাড়াও দেশের চাকরির বাজার এবং দেশে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থানের ও খেয়াল রাখতে হবে। 

এরইসাথে সাকিব খালেদ আরো বলেন, আমাদের দেশের বাবা-মা দের সন্তানের উপর তার ক্যারিয়ার চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা বদলাতে হবে। অন্যথায়  ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়াও যারা নিজের পছন্দমতো বিষয়ে পড়তে পারেনি তাদেরও ক্যারিয়ারের পথ বদলানোর সুযোগ রয়েছে তবে থাকতে হবে পর্যাপ্ত স্পৃহা। তবে জীবনের পড়াশুনা, ক্যারিয়ার এসবের চাপ নিতে গিয়ে কাছের মানুষদের দূরে সরিয়ে দেওয়া যাবে না এবং জীবনের আনন্দময় মুহূর্তে যাতে কোনো বাঁধা না হয় সেদিকেও নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।  

 

 

এই ওয়েবিনারটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Scroll to Top