ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নমুখীঃ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন প্রসঙ্গ

লিখেছেনঃ মোঃ আলী আহসান    

সুচনাঃ রাজশাহী বাংলাদেশের শিক্ষা নগরী এবং সিল্ক সিটি। উত্তরের এই জনপদের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়ে ধীরে ধীরে অনেক জেলাকে সংযুক্ত করেছে। বাংলাদেশের মিঠা পানির অন্যতম উৎস এবং বরেন্দ্র জনপদ তথা দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্পের মূল চালিকা শক্তি এই পদ্মা নদী। উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারনে পদ্মা নদীর স্বাভাবিক গতিধারা অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলের কৃষকদের অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে এবং এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পরছে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের সার্বিক ইকো সিস্টেমে। আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ ব্যাবস্থা এবং সুপেয় পানি ব্যাবস্থাপনায় এর ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী প্রভাব পরছে। এই কারনে এই অঞ্চলের অন্যতম প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহী মহানগরীতে সুপেয় পানির সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে।                                                                   

বাংলাদেশে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে দিনকে দিন পানির এই সমস্যা আরও বারছে। বিশেষত বিগত ২০১৫ সাল থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক ভাবে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং শহরের জনসংখ্যা বাড়ার প্রবনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবনতা ভবিষ্যতে রাজশাহিকে মেগা সিটির কাতারে নিয়ে যাবে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পানি ব্যাবস্থাপনার বিষয়টি প্রয়জনের তুলনায় অপ্রতুল গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা গুলোর মধ্যে ফলপ্রসু সমন্বয়ের মাধ্যমে সামনের দিকে এই ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়ন জরুরী।         

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার প্রধান কারন সমুহঃ                           

১। উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া।                  

২। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে প্রাকৃতিক ওয়াটার রিজার্ভারের সংখ্যা কমে যাওয়া।                                       

৩। পানি ব্যাবস্থাপনায় সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অনুপস্থিতি।                                                                  

৪। পানি ব্যাবস্থাপনার ক্ষেত্রে জনগনের সচেতনতার অভাব।                                                                               

প্রস্তাবনাঃ                                                                         

১। পদ্মা নদীর বাংলাদেশ প্রবেশ মুখে পরিকল্পিত ভাবে ওয়াটার রিজার্ভার তৈরি করে সেখান থেকে সার্ফেস ওয়াটার সঞ্চালনা লাইন করা।                            ২। স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা গুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একটি ওয়ান স্টপ সমস্যা সমাধানের প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করা।                     ৩। সুষ্ঠু পানি ব্যাবস্থাপনায় জনগনের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহন বৃদ্ধি করা।
৪। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন একটি দ্রুত বর্ধনশীল নগর এলাকা হওয়ায় এর সাথে লাগোয়া সাব-আরবান এলাকা গুলোতে শহরভিত্তিক কৃষি ব্যাবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এর ইকো সিস্টেমকে রক্ষা করা।
৫। বিশেষত শিক্ষা নগরী হিসাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক জন সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা।                  

বাংলাদেশের অন্যতম পরিচ্ছন্ন ও নির্মল বায়ুর শহর হিসাবে রাজশাহীর অবস্থান বিশ্বস্বীকৃত, এই ইতিবাচক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার পানি ব্যাবস্থাপনাকে আরও সুসংগঠিত কর এখন সময়ের দাবী।

Leave a Comment

Scroll to Top