বিশ্ব পরিবেশ দিবস: পাহাড়ে দূষণ কি শুধু পরিবেশ কেন্দ্রিক আলোচনা?

লিখেছেনঃ সৈয়দা আশফাহ তোহা দ্যুতি
সমতলের বাঙালিদের কাছে ‘পাহাড়ে দূষণ’ ফেসবুকের এই ভাইরাল প্লাস্টিক অধ্যুষিত পাহাড় পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে গেলে আমরা ‘নীতি বিতর্কে’ আটকে যাই। অনেকে আবার সচেতনতা সৃষ্টির দিকে জোর দিতে বলেন।
ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় স্থান বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। ফেসবুক, ইউটিউব ও ভিডিও কন্টেন্টের যুগে যে কেউ সাজেকের নীল আকাশ কিংবা বান্দরবানের প্রকৃতি ভিডিও অথবা ছবিতে ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে। সেই সাথে হয় সমতলবাসীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি। কোভিডের কড়া লকডাউনের মধ্যেও অনেকে ভিড়েছেন এসব পাহাড়ি এলাকায়।
পর্যটকদের আকাঙ্ক্ষাকে ব্যবসায়ীরা পুঁজি করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে নির্মাণ করছে পাঁচ তারকা হোটেল।
লেনিক চাকমা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। যেমন, পাহাড়িরা পানি সংগ্রহ করে ঝর্ণা থেকে। ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে তাদের বেঁচে থাকা। সাজেক ও তার আশেপাশে যখন হোটেল তৈরি হবে, পাহাড়িদের পানি এই একমাত্র উৎসে চাপ পড়বে। পর্যটকদের উপযোগে পাথর ব্যবসায়ীরা পাহাড়িদের খাবার পানির এই উৎসের পাথর উত্তোলন করবে। এটি শুধু স্থানীয়দের উপর অত্যাচারই নয়, বাস্তসংস্থানের সকল উপাদানের উপরেও অনাচার।
পাহাড়িরা খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য নিজেদের শিল্প ও কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। শহরের প্লাস্টিক প্যাকেটজাত খাবার, প্লাস্টিকের বোতল ও তৈজসপত্র সেই এলাকায় ঢুকেছেই কালের পালাক্রমের সমতলের পর্যটকদের হাত ধরে। এই প্লাস্টিক, পলিথিন ও অজৈব আবর্জনার পরিমাণ আরো বাড়বে — সামনে যখন পাঁচ তারকা স্থাপত্যগুলো মাথা তুলে দাঁড়াবে।
“পাহাড়ে দূষণ” শুধু পরিবেশ দিবস কেন্দ্রিক আলোচনা হতে পারে না। বিষয়টি রাজনৈতিক এবং আরো প্রসারিত” – জানালেন লেখক রিদওয়ানুল হক।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প জনপ্রিয়করণে সরকারের প্রকল্পগুলো আশা জাগানিয়া। কিন্তু, এই প্রকল্পেগুলোর কোনোটিতেও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতবাদ দেয়ার জায়গা নেই৷
নীতির অভাবে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের দূষণের প্রত্যক্ষদর্শী সমতলবাসীরা। মানবিক দিক দিয়ে না হলেও, বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা থেকে পাহাড়ের দূষণ ঠেকাতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অ-আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবী। যাতে, বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের সৌন্দর্য স্মৃতি না হয়ে যায়।
ছবির উৎস: ওয়াক বাংলাদেশ

Leave a Comment

Scroll to Top