ওয়াইপিএফ ফিল্ড ভিজিটঃ শাল্লার বর্তমান পরিস্থিতি

শাল্লা, সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৬৫ কি.মি. দক্ষিণে দুর্গম হাওড় এলাকায় এই উপজেলার অবস্থান। বছরে প্রায় ৭ মাস এ অঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং অবশিষ্ট প্রায় ৫ মাস শুকনো মৌসুম।

ওয়াইপিএফ মাইনোরিটি এডভোকেসি ক্যাম্পেইনের ফিল্ড রিসার্চ এর অংশ হিসেবে ওয়াইপিএফ গ্রাসরুটস নেটওয়ার্কের লিড প্রদ্যুৎ পাল এবং ওয়াইপিএফ পলিসি এনভয় আশহার ইনতেযাম গিয়েছিলেন শাল্লার নোয়াগাঁও এ। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নয়ন ঘটলেও তার বেশিরভাগই খাটেনা প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের ক্ষেত্রে।

গত মার্চ মাসের ১৭ তারিখ নোয়াগাঁও এর হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর সহ তাদের উপর আক্রমণ এবং লুটপাট করা হয়। ওয়াইপিএফ মাইনোরিটি এডভোকেন্সি ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে স্থানীয়দের সাথে আলোচনায় উঠে আসে, মাতৃমৃত্যু এখানে এখনও বেশ নিয়মিত ঘটনা,জন্মদান অনেকটাই ধাত্রী নির্ভর। শিশুশিক্ষায় নেই কোন অগ্রগতি।

কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের মানুষগুলো এখনও মৌলিক অধিকারের বাইরে।পেটে খাবার জোগানোর তাগিদে বেশিরভাগ শিশুই নিতে পারেনা প্রাথমিক শিক্ষা তাও বা যারা স্কুলে যায়, ক্লাস করতে পারে সপ্তাহে কেবল ১২-১৫ ঘন্টা, নেই প্রাইভেট টিউশন নেয়ার সুযোগ কিংবা সামর্থ্য। আর স্বাস্থ্যসেবার তো করুণ অবস্থা।

এসব সমস্যাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রত্যন্ত হওয়ায় ভালো চিকিৎসকেরও এমন এলাকায় থাকতে অনীহা। সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চলছে দায়সাড়া ভাবে। বেশিরভাগ সময়েই পাওয়া যায়না প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ঔষধ, এমনটাই বলছিলেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি এ এলাকায় ধর্মীয় সহিংসতা রুপ নিয়েছে খুবই খারাপ অবস্থায়।

যোগাযোগ ব্যবস্থার করুণ দশা ভাটির এই সম্ভাবনাময় অঞ্চলটিকে ফেলে দিয়েছে একদম বাতিলের খাতায়। এই সময়ে এসেও একমাত্র সড়ক হিসেবে বাঁশের সাকো আর জমির আইলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একটি উপজেলায় যা আমাদের টিমের জন্য ছিল একদম নতুন অভিজ্ঞতা। বৃষ্টির পর ফেরার পথে এই রাস্তা আমাদের জন্য রূপ নিয়েছিল রীতিমতো মরণফাঁদে।

একটা সময় এই অঞ্চলে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করলেও এখন আর নেই অতটা আড়ম্বর। ব্র্যাকের জন্ম এই অঞ্চলে হলেও এই অঞ্চলের মানুষের এখনও যথেষ্ট সাহায্য প্রয়োজন।

সবকিছুর পরেও এইসব মাটির মানুষের আতিথেয়তা মুগ্ধ হয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিদল। আশা করছি তাদের সমস্যাগুলো নীতিনির্ধারকরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন এবং আশু সমাধানে সচেষ্ট হবেন।

Leave a Comment

Scroll to Top